সে পরম পরিপূর্ণ প্রভাতের লাগি, হে ভারত, সর্বদুঃখে রহো তুমি জাগি সরলনির্মলচিত্ত-- সকল বন্ধনে আত্মারে স্বাধীন রাখি, পুষ্প ও চন্দনে আপনার অন্তরের মাহাত্ম্যমন্দির সজ্জিত সুগন্ধি করি, দুঃখনম্রশির তাঁর পদতলে নিত্য রাখিয়া নীরবে। তাঁ' হতে বঞ্চিত করে তোমারে এ ভবে এমন কেহই নাই-- সেই গর্বভরে সর্বভয়ে থাকো তুমি নির্ভয় অন্তরে তাঁর হস্ত হতে লয়ে অক্ষয় সম্মান। ধরায় হোক-না তব যত নিম্ন স্থান তাঁর পাদপীঠ করো সে আসন তব যাঁর পাদরেণুকণা এ নিখিল ভব।
বাণীর মুরতি গড়ি একমনে নির্জন প্রাঙ্গণে পিণ্ড পিণ্ড মাটি তার যায় ছড়াছড়ি, অসমাপ্ত মূক শূন্যে চেয়ে থাকে নিরুৎসুক। গর্বিত মূর্তির পদানত মাথা ক'রে থাকে নিচু, কেন আছে উত্তর না দিতে পারে কিছু। বহুগুণে শোচনীয় হায় তার চেয়ে এক কালে যাহা রূপ পেয়ে কালে কালে অর্থহীনতায় ক্রমশ মিলায়। নিমন্ত্রণ ছিল কোথা, শুধাইলে তারে উত্তর কিছু না দিতে পারে-- কোন্ স্বপ্ন বাঁধিবারে বহিয়া ধূলির ঋণ দেখা দিল মানবের দ্বারে। বিস্মৃত স্বর্গের কোন্ উর্বশীর ছবি ধরণীর চিত্তপটে বাঁধিতে চাহিয়াছিল কবি, তোমারে বাহনরূপে ডেকেছিল, চিত্রশালে যত্নে রেখেছিল, কখন সে অন্যমনে গেছে ভুলি-- আদিম আত্মীয় তব ধূলি, অসীম বৈরাগ্যে তার দিক্বিহীন পথে তুলি নিল বাণীহীন রথে। এই ভালো, বিশ্বব্যাপী ধূসর সম্মানে আজ পঙ্গু আবর্জনা নিয়ত গঞ্জনা কালের চরণক্ষেপে পদে পদে বাধা দিতে জানে, পদাঘাতে পদাঘাতে জীর্ণ অপমানে শান্তি পায় শেষে আবার ধূলিতে যবে মেশে।